প্রতিযোগিতা ও schrodinger এর অনিশ্চয়তা নীতি

Scroll this

কোন কারনে competition জিনিসটা আমার রক্তের সাথে কিছুটা মিশে আছে । দুনিয়ার যদু-মদু কোন একটা প্রতিযোগিতায় আমার নাম আছে, এইটার পরীক্ষা/ইভেন্ট হবে অমুক তারিখ, আর পরে এইটার Ranking প্রকাশ হবে- এইটা শুনলেই আমি বেশ pumped up হয়ে উঠি । এই যেমন নটরডেম কলেজে থাকতে প্রতিটার্মের পরে ১২০০ ছাত্রের একটা মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে, অথবা OMECA তে করা বুয়েট এডমিশন টেস্ট এর কোচিং এ প্রতিসপ্তাহের পরীক্ষার একটা রেজাল্ট দিত। হায়রে কত আগ্রহ , কত সাধনা আমার সেইসব পরীক্ষায় ভালো করার জন্য । একটা পরীক্ষায় দুইটা পজিশন উপরে উঠার জন্য সকাল-বিকাল-রাত একাকার করে পড়তে আছি তো পড়তেই আছি । তো হইল শেষ এক পরীক্ষা , তারপর সামনের পরিক্ষার জন্য জন্য আবার একই সাধনা ।
কলেজ শেষ করে বুয়েটে ঢুকলাম । ওমা দেখি এইখানে কোন র‍্যাঙ্কিং নাই, cgpa এর যোগ-বিয়োগ-এভারেজ এর খেলা । এই জিনিস তো মনে ধরেনা। আমার মন খুইজা বেরায় আর কোথায় competitive spirit রে কাজে লাগানো যায় ? একদিন দেখি বুুয়েটে বিভিন্ন club এর নতুন সদস্য recruitment এর জন্য একটা বুথ খোলা হইসে , আছে Buet Debating Club আরও অনেক ক্লাব ছিল গান-সংস্কৃতি রিলেটেড ক্লাব ‘মূর্ছনা’ , রক্ত দেয়ার ক্লাব বাঁধন। মনে মনে ভাবলাম , বিতর্কের ক্লাবটায় গেলে কিছু competition করা যাইতে পারে , আবার ডিবেটিং ক্লাবের বুথে বসা আপুটাও বেশ কিউট । ওইটার গিয়ে ফর্ম নিয়ে আসলাম । পরের ৫ বছর কম হলেও নিজের undergrad academic life এ যেই পরিমান পড়াশুনা করসি তার থেকে ৫ গুন সময় দিলাম বিতর্কের পেছনে । কম হইলেও ২ হাজার ঘন্টা প্লাস । competitive debating এ একটু ভালো করার জন্য হায়রে কি কি কান্ড করতাম, ভালোই লাগে মনে পড়লে । ইংরেজিতে stammering দূর করতেই ১ বছর লেগে গেছিল- মনে আছে – মনের কথা মুখে না আসার সে কি অসহায়ত্ব । বাস থেকে নেমে টিউশনি তে হেটে যাওয়ার ১০-১৫ মিনিট সময়ও speech practice করতাম । কি অসম্ভব ভালোবাসতাম competitive debating কে । আর, সারাবছর ব্যাপী ২-৩ টা করে টিউশনি করাতাম যেন জমানো টাকা দিয়ে বছর শেষে international debate tournament গুলো করতে পারি । যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের কেসকে গুড়িয়ে দেয়ার যে intense thrill , bubble room এর টানটান উত্তেজনার বিতর্কে জিতে bubble ভেঙ্গে নেক্সট রাউন্ডে যাওয়ার যে রোমাঞ্চ , ৩-২ ব্যালটে ফাইনাল জেতার যে অসম্ভব স্বস্তি – বিতর্ক না করলে অজানাই থেকে যেত তা ।
আমার প্রথম competitive Stage Magic show ছিল ২০১১ তে । হায়রে কি পাগলামি গুলো করতাম magic show গুলোর আগে । perfect stage illusion কোন টিম ছাড়া একা pulloff করা খুবই দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার । আপনাকে, সুই-সুতার মত ছোট জিনিস থেকে, ঢাউশ সাইজের মেকানিকাল ডিভাইস, লাইটিং, stage-rigging, sound সবকিছু একমাথায় নিয়ে perform করতে হবে। বরাবরই show এর আগে আমি obsessive compulsive disorder এ ভুগতাম , প্যানিক করতাম। তবে, আমার দর্শক কখনই সেটা বুঝতে পারতোনা। কারণ কম হলেও ৩০০ বার একটা ম্যাজিক ঠিকভাবে practice না করে আমি স্টেজে উঠতামনা । প্রতিবার stage এ miracle pull-off করার যে thrill , আর cliffhanger মুহূর্তে দর্শককে বিমোহিত করে শিল্পী-আর দর্শকের একাত্মা হবার যেই মুহূর্তটা – সেইটার দাম আমার কাছে অমুল্য ।
২০১৪ তে পাশ করে চাকরি-বাকরি শুরু করার পরে হঠাত করেই জীবন থেকে competitive debate , magic হারিয়ে গেল। অফিস ভালো , team ভালো, টাকাপয়সাও ভালো – কিন্তু কিজানি নাই নাই লাগে, অদ্ভুত শুন্যতা লাগে। তো আমি কি সারাজীবন ৯-৫ টা desk এ বসে coding করেই জীবন কাটায়ে দিবো ? সারাজীবন adrenaline rush কে চেজ করা একজনের জন্য কি নিদারুন করুন পরিনতি , বিজনেসের ভাষায় ক্লাসিক product market mispatch যেটা । একবছর কেটে গেল এইভাবনাতেই।তারপর ভাবলাম, যেইটা করে সারাজীবন খেতে হবে , সেই প্রোগ্রামিং এর competitive side টা explore করলে কেমন হয় ? টানা ২ বছর programming contest করলাম । অফিসে ৮-১০ ঘন্টা code করে বাসায় এসে ৩-৪ ঘন্টা problem solving করতাম। দৈনিক ১২-১৪ ঘন্টা কোডিং করলাম টানা ২ বছর। codechef, codeforces, leetcode এর contest গুলো খুবই মজা পাওয়া শুরু করলাম। তবে, ২ বছর এত পরিমান screen এর সামনে ছিলাম যে ২০১৭ তে burnout feel করা শুরু হইল। তখন দেখি মন-মেজাজ খিটখিটা থাকে , ওজন বেড়ে গেসে, রাতে ঘুম হয়না ঠিকমত , problem solving ও একঘেয়ে লাগা শুরু করল।
তারপর ভাবলাম, একটু ব্রেক নেই। ২০১৭ সালে অফিসের পাশে একটা জিমে ভর্তি হই। অফিসের পড়ে code না করে workout করা শুরু করলাম। সারাজীবন আমি বেশ physically inactive ছিলাম- strength/ athleticism একেবারেই ছিলনা আমার । তবে, workout শুরু করে দেখি নতুন ডাইমেনশনের strength potential আনলক হইসে । এক বছর জিম করার পরে দেখি আমার ছোট জিমের প্রায় সমস্ত weight plate দিয়ে আমি deadlift, squat, bench-press, rows করতেসি। আমি ব্যায়াম করলে আরেকজনের ব্যায়াম করতে মুশকিল হয়ে যায়, weight plate এর অভাবে। জিমের মাহমুদ ভাই বললো, powerlifting competition এ নাম দিতে । ২০১৮ থেকে powerlifting competition গুলোতে অংশ নেয়া শুরু করলাম। এখন কভিডের সময় বাসায় সপ্তাহে ৩ দিনের মত workout করি। প্রতি সপ্তাহে আগের সপ্তাহের workout এর personal record ভাঙার চেষ্টা করি। অসম্ভব ভালো লাগে। I While working out I feel there is no future, no past. All is now. I feel alive at this present moment. I feel like a gladiator .
মেধাতালিকা , বিতর্কের পডিয়াম, ম্যাজিকের স্টেজ, competitive coding ,powerlifting- সারাজীবন নেশাখোরের মত competition seek করা এই পাগলা ঘোড়ার একটা realization আছে । প্রতিযোগিতায় জেতা তুলনামুলক সহজ , এইটার একটা সময়সীমা থাকে একটা সিলেবাস/playbook থাকে । তবে, নিজের সাথে যেই প্রতিযোগিতা , সেইটা কঠিন – এটায় সারাজীবন ব্যাপী কমিট্মেন্ট লাগে । জীবনের বিশালতার সামনে এসব প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড় , এসব ট্রফি নগন্য। মেধাতালিকায় শীর্ষে থাকা অনেক ছেলে-মেয়ে ঝরে পড়ে জীবনের রেস এ । ছাত্রজীবনে সবচেয়ে সফল বিতার্কিকও যদি বই-পড়া বাদ দেয়, যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার প্র্যাকটিসে না থাকে তবে বছর খানেকেই হারিয়ে যাবে তার ক্যারিশ্মা । গত অলিম্পিকস এ রেকর্ডসংখক সোনাজয়ী সাতারু মাইকেল ফেল্পস এখন যেমন depression এর সাথে যুদ্ধ করতেসে । সর্বকালের অন্যতম সেরা bodybuilder , Ronnie Coleman – যে কিনা ৮ বার মিঃ olympia হয়েছিল কিন্তু তার পর থেকেই আর হাটতে পারেনা weight lifting সংক্রান্ত ইনজুরির কারনে । চিন্তা করেন ব্যাপারটা – সর্বকালের সবচেয়ে accomplished bodybuilder এর extreme workout routine ই একই সাথে তাকে ৮ বার world champion বানালো আবার তার হাটার শক্তিও কেড়ে নিল।
আমাদের জীবনে আসলে গন্তব্যের চেয়ে এখানে পৌঁছাবার রাস্তাটাই বেশি চমকপ্রদ । প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এইটা গ্রাফে একটা বিন্দুমাত্র – আর আমাদের জীবন একটা 2d বক্ররেখা – যা এরকম অসংখ্য বিন্দুর continuum. বিন্দুতে বেশি ফোকাস করতে গিয়ে , আমি প্রায়শই আসল জিনিস মিস করে গিয়েছিঃ তা হচ্ছে এখনকার মুহূর্তটাকে enjoy করা । ২০১৯ সালে এই জিনিসটা বুঝতে পারসি। তাই জীবনে এত কম্পিটিশন চেজ করার চেষ্টা আগের থেকে কম করি। প্রিয় মানুষকে প্রতিদিন বলি যে অনেক ভালোবাসি । আম্মু-আব্বুর সাথে সময় নিয়ে বসে চা খাই গল্প শুনি । পছন্দের গানগুলো প্রতিদিন শুনি । প্রিয় বন্ধুদের সাথে সপ্তাহান্তে লম্বা সময়ে কথা বলি । বা এইজে আজকে আপনাদের জন্য এই মনের কোথাগুলো লিখলাম প্রায় অর্ধবেলা সময় নিয়ে চিন্তা করে- কোন চাওয়া পাওয়া প্রতিযোগিতা , ট্রফির লোভ ছাড়া – এমনেই জমতে থাকা মনের কোথাগুলো লেখে ফেললাম। সবসময়ই goal থাকতে হবে আসলে সেরকম টা না , কিছুটা সময় ভবঘুরে, উদ্যেশ্যহীন ভাবে কাটানোটাও জরুরি আমার মনে হয়।
কি অদ্ভুত এক পাজেল আমাদের জীবন, অনেকটা schrodinger এর অনিশ্চয়তা নীতির মতঃ আপনার জীবনের ট্রেন জার্নিতে উল্লেখযোগ্য গন্তব্যের গুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দিলে জার্নিটা আনন্দময় হবেনা ঘুম-খাওয়া-গল্প-গান মিস হয়ে যাবে , আবার জার্নি বেশি আনন্দময় করতে গেলে আপনি সেরা ডেসটিনেশনগুলো দেখতে পারবেননা।যাত্রীর কাছে জার্নি আর ডেসটিনেশন এর ব্যালান্সিং পয়েন্ট অনির্ণেয়। আর, ব্যালান্স করার ক্ষণিকের বৃথা চেষ্টা করতে করতেই যাত্রাপথ শেষ। গৌতম বুদ্ধের দুটি বাক্য দিয়ে শেষ করছি :
– “You cannot travel the path until you have become the path itself.”
– “Do not dwell in the past, do not dream of the future, concentrate the mind on the present moment.”

Tags:

Submit a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *