লস্ট ইন বেলজিয়াম

Scroll this

লস্ট ইন বেলজিয়াম !

Booking.com এর ইনভাইটেশনে নেদারলেন্দস এ যাই এই ফেব্রুয়ারি মাসে(২০১৭) , আমি আর আমার বন্ধু কায়সার । নেদারল্যান্ডস এর পাশেই বেলজিয়াম। তাই কাজ শেষে ট্যুরের শেষ দিন ভোরবেলা নেদারল্যান্ডস থেকে বাসে করে রওনা দেই দুজন ব্রাসেলস, বেলজিয়াম এর উদ্দ্যেশ্যে । প্ল্যান ছিল ঘুরবঃ ব্রাসেলসের Grand place, atomium,mini-europe এবং এর আশেপাশের জায়গাগুলো । কিছুটা metro-rail, কিছুটা বাস/ট্রাম আর বাকিটা হেটে কভার করবো এই জায়গাগুলোর- আর, সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় আবার ঐ একই বাসে করে নেদারল্যান্ডস ফেরত যাবো । পরের দিন ভোরেই আমাদের নেদারল্যান্ডস থেকে ঢাকার ফ্লাইট ।

সকালে ৩ ঘণ্টারও কম সময়ে পৌঁছে যাই ব্রাসেলস এ। 
ব্রাসেলসের সেদিন বেজায় মন খারাপ। তাপমাত্রা ৭-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং প্যাচপাচে বৃষ্টি সারাটা দিন ।ব্রাসেলস এ নেমেই খেয়াল করলাম আমাদের মোবাইল সিমে ইন্তারনেট পাচ্ছিলনা কোন কারনে। google map ছাড়া নতুন দেশের রাস্তা-ঘাট খুজে বের করা তো টিনটিন এর অ্যাডভেঞ্চার কিংবা রাডারবিহীন জাহাজ-চালানোর এর মতই দুরুহ। একদম কানার ভাই অন্ধের মত অবস্থা । জিগেশ করে করে, Grand place এ যাই আমরা। তবে, বৃষ্টিতে ভিজে আর হারকাপুনি ঠাণ্ডা বাতাসে প্রচন্ড মাথা-ব্যথাসহ জ্বর চলে আসে কায়সার এর ।

ও বলে, ‘দোস্ত আমি আর পারতেসিনা। আমার ঘুমাইতে হবে’ । 
কি বিপদ, এই নতুন দেশে রাস্তাঘাটে এখন কই ঘুম পাড়ানো যায় কায়সার কে? 
তারপর, রেলস্টেশনে গেলাম আমরা। সকল বসার বেঞ্চি দখল করা থাকায়, মাটিতে শুয়ে পরে কায়সার। দুই ঘণ্টার এক লম্বা ঘুম দেয়। 
ঘুম শেষে ওর মাথা ব্যথা কমায় আমরা আবার যাত্রা শুরু করি। train-bus হপিং করে ঘুরে আসি Atomium জায়গাটা।

এবার Atomium থেকে আমাদের সেন্ট্রালে ফেরার পালা। সেন্ট্রালে আমাদের বেলজিয়াম টু নেদারল্যান্ডস এর ফিরতি শিডিউল্ড বাস ধরতে হবে ।
Atomium থেকে সেন্ট্রালে ফিরতে গিয়ে আমরা ট্রেনে এক স্টেশানে নামতে গিয়ে আরেক স্টেশানে নামি। তারপর, আর station এর হিসেব মিলাতে পারিনা। 
অধিকাংশ মানুষ dutch কিংবা french কিংবা german ভাষায় কথা বলে। আমাদের গন্তব্যে কিভাবে যাওয়া যায় লোকালদের এই প্রশ্ন ইংরেজিতে করায়, ওদের dutch/ french উত্তর শুনে কনফিউশন কমেনি তো এক ছটাকও, বরং বেড়ে গেছে কয়েকগুন।

এক স্টেশনেই দেড় ঘণ্টা পার হয়ে যায়, আর ওদিকে মাত্র ৪০ মিনিট পরে , সন্ধ্যা ৭:৩০ এ আমাদের বেলজিয়াম টু নেদারল্যান্ডস এর ফিরতি শিডিউল্ড বাস। 
তারপর, এক ইরানি মুসলিম ভাই এর কথা শুনে বুঝতে পারলাম কোন রুটে আমাদের গন্তব্য সেন্ট্রালে জেতে পারবো। সবচেয়ে তাড়াতাড়ি হবে, ট্যাক্সি পেলে। তবে, uber/local taxi ও পাচ্ছিলাম্না ঐ মুহূর্তে। দুজনেই প্যানিক করতেসি। কারন, ৭:৩০ এর বাস ধরতে না পারলে, পরের দিনে দেশে ফেরার ফ্লাইট ও ধরতে পারবনা। একদম মাঠেমারা অবস্থা হবে তখন ।

তারপর, সেই ইরানি ভাই এর পরামর্শ অনুযায়ী এক বাসে উঠলাম। বাস থেকে তিন স্টপ পরে নেমে, আরেক বাস ধরতে হবে, তারপরও বেশ কিছুদুর হাটতে হবে। খুবই confusing পথ। 
বাসে আমরা যখন স্টপেজ কাউন্ট করতেসিলাম তখন পাশের সিটে এক ভদ্রলোক বলে উঠে, “আপনারা কি বাঙালি?”

বাংলা শুনে আত্মায় পানি আসে একটু । আমাদের অবস্থা দেখে উনি বললেন, “চলেন আপনাদের সাথে যাই” । ভদ্রলোকের নাম আলমগির, বাড়ি চিটাগং , পেশায় ব্যবসায়ী । বাস থেকে নেমে ওনার আলমগির ভাই shortest path এ ১৫ মিনিটে আমাদের গন্তব্য সেন্ট্রালে নিয়ে যান । 
আমরা যখন সেন্ট্রালে পৌছাই, বাস ছাড়তে আর ১.৫ মিনিট ছিল। এই বেলায় আলমগীর ভাই এর জন্য বেচে গেলাম…

Tags:

Submit a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *