২০১৫, ২০১৬ সালে আমি ‘Year of Code’ চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছিলাম, অর্থাৎ টানা দুই বছর অফিসের কাজ শেষে বাসায় এসে অন্তত একটা programming problem সল্ভ করতাম, আর উইকেন্ডে টানা programming contest করতাম । এই করে ক্যারিয়ারে বেশ উপকার হয়েছে বটে, তবে ২০১৭ এর শুরুতে আমি burnout এর চুরান্তে পৌঁছেছিলাম ।
চোখের নিচে কালো দাগ , চুল পড়ে সয়লাব , প্যান্টের কোমর এর মাপ বেড়ে গেসিলো অনেকগুলো ইঞ্চি। কয়েকটা সিড়ি বেয়ে একটু তাড়াতাড়ি উঠতে গেলেই দেখি ঘনঘন শ্বাস ফেলতেসি, অল্পতেই টায়ার্ড হয়ে উঠি । বন্ধু-বান্ধব , আত্মীয়দের সাথেও দেখা হত খুব কম। প্রোগ্রামিং বাদে আর একটাও বই পরিনাই ঐ দুই বছর। ১০ এ ১০ প্রোগ্রামার হতে গিয়ে , প্রোগ্রামিংটা বাদে জীবনের বাকি সব ক্ষেত্রে ১০ এ শূন্য কিংবা এক ।
আবার ঐদিকে , ২০১৭ এর শুরুতে- গুগল আর বুকিং ডট কম এ ফাইনাল অনসাইট রাউন্ড এ রিজেক্ট খেলাম- যেটার মানে হইল, নেক্সট ৬ মাসের মধ্যে আবার এপ্লাই করা যাবেনা এসব জায়গায়।
তখন ভাবলাম , আচ্ছা তাইলে একটু ব্রেক নেই- সামনের ৬ মাস ।
অফিসে তখন , এক প্রিয় বড়ভাই আর কলিগ সৈকত ভাই – weightlifting শুরু করসে । জিম শুরু করার ৬ মাসের মধ্যেই দেখি ভাই, বিশালবপু থেকে একদম নায়কের মত পিটানো শরীর বানায়ে ফেলসে ।
তারপর ভাবলাম, পাইসি বুদ্ধি। সামনের ৬ মাস জিম করি । টানা এতদিন এর burnout টা হয়ত কিছুটা কাটবে ।
জিম এ নিয়মিত ব্যায়াম করা অসম্ভব উপভোগ করতে শুরু করলাম ।
hard workout এর জন্য দেখি রাত ১১-১ঃ৩০ টার দিকে চোখ ভেঙ্গে ঘুম চলে আসে তখন। তাই রাত জাগা বন্ধ হইল। রেগুলার স্লিপ-সাইকেল টা ফেরত আসলো । যার ফলে দেখি তখন, মন মেজাজ ফ্রেশ থাকে – ফোকাস নিয়ে কাজ করতে পারি।
আর, এত কষ্ট করে যখন ব্যায়াম করতেসি – তখন , পিজা-বার্গার আর হাবিজাবি খাওয়ার সময় দেখি আমার ব্রেইন শুরু calorie calculate করে- আর ভাবে, ধুরশালা এইবেলায় এইটা খাইলে তো আমার ৩ দিনের ব্যায়ামের কষ্ট মাটি । তখন, খাওয়া-দাওয়া ঠিকভাবে করা শুরু করলাম, আবজাব জিনিস কম খেয়ে প্রোটিন আর ভেজিটেবল কে প্রায়োরিটি দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম ।
খাওয়া-ঘুম ঠিক করার পর দেখলাম জিমে compound lifts গুলোতে তরতর করে শক্তি বারতেসে । সুস্বাস্থ্য এর চমৎকার একটা flywheel ঘুরা শুরু হল ।
২০১৭ থেকে এই পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে আমি জিমে গিয়েছি squat, deadlift, pullup, benchpress, overhead-press এ আগের সপ্তাহে আমার record ভাঙার জন্য । এর মধ্যে ২ বার ন্যাশনাল powerlifting meet এ খেলেছি – জুটেছে একটা ছোটমোট powerlifting runner-up trophy ও । তবে , আরও একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে যেটা আগে এক্সপেক্ট করিনি। যদি, একটা গ্রাফ প্লট করি যেটার X- axis এ আমার strength , আর Y-axis এ একটা ভালো জীবনের বাকি সমস্ত প্যারামিটার , যেমনঃ happiness , knowledge, meaningful work, money , relationship etc .
আমি খেয়াল করলাম, আরে- আমার গ্রাফটা তো খুব পরিচিত, Y= a*X+ b এর গ্রাফ এইটা ।কারন , গত ৬ বছরে আমার strength বাড়ার সাথে সাথে জীবনের বেশীরভাগ জিনিস quality আর quantity উভয়দিক দিয়েই প্রায় সরলরৈখিক ভাবে বেড়েছে ।
হার্ডওয়্যার যেকোনো ডিভাইসই আপনি বসায়ে রাখবেন, দুইদিন পর দেখবেন মরিচা পড়েছে, চালু হইতে চাচ্ছেনা – আর, এই দুর্বল হার্ডওয়ার এর server এ সবচেয়ে optimized software চালালেও দেখবেন ঝিমায়ে ঝিমায়ে চলতেছে। আর, আপনি GPU Server এর মত শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এ দেখবেন সবচেয়ে unoptimized software ও দুর্বার গতিতে চলতেছে।
মধ্য ত্রিশ এ এসে আমার সকল software এর এই বেড়ে যাওয়া গতি দেখে বুঝেছি যে আমার “Hardware Upgrade” ঘটেছে
আমার ধারনা, সৃষ্টিকর্তা মানুষের শরীর বানিয়েছে শিকার করে খাওয়ার জন্য – হয়ত এইটা by design ই এরকম যে “When fitness improves, everything improves”
আমি আমার সমস্ত প্রিয়জনকে , অনুরোধ করবো – যদি এক্সারসাইজ না করে থাকেন, প্লিজ শুরু করুন, আপনার সমস্ত প্রিয় মানুষকেও এক্সারসাইজ করতে বলুন ।
আপনারা আপনাদের Hardware Upgrade করেন, দেখবেন সমস্ত সফটওয়্যার এর গতি বেড়ে গেছে 😄
Mahdi Mashrur Matin
Engineer.StoryTeller.Life Enthusiast