আমার খুব কাছের মানুষেরা জানে আমার স্মৃতি বেশ দুর্বল , যেকোনো নতুন জিনিস শিখতে আমার অন্যদের থেকে গড়পরতা সময় বেশ বেশি লাগে । বুয়েটে লেভেল-১, টার্ম -২ তে যখন নতুন যখন সি প্রোগ্রামিং ল্যঙ্গুয়েজ শিখতেসি তখন আমারই সহপাঠীরা যখন ১০ মিনিটে একটা প্রোগ্রামিং প্রবলেম এর সল্ভ করে ফেলত, ঐদিকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমি প্রায়শই ২ ঘন্টাতেও ঐ সমস্যা মাঝে মাঝেই সমাধান করতে পারতামনা । কিংবা, নতুন নতুন যখন বিতর্ক শুরু করি ১ বছরেরও বেশি সময় লেগে যায় বেসিক কথার জড়তা কাটাতেই । বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারি , স্বল্প প্রিপারেশনে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট দৌড়ানো আমাকে দিয়ে হয়না, তবে দীর্ঘ প্রিপারেশনে ম্যারাথন দৌড়ানোতে আমি মোটামোটি ভালো পারি।
আমার আগ্রহের কোন ব্যাপারে, জানার জন্য- বোঝার জন্য- শেখার জন্য আমি অসম্ভব কৌতূহলী । লম্বা সময় ধরে লেগে থেকে একটা জিনিস গভীরভাবে রপ্ত করার ব্যাপারটা আমি অসম্ভব পছন্দ করি । আমার কৌতূহলী সেটার লিস্টি একটু লম্বা : তথ্য নিরাপত্তা , সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং , ম্যাজিক, ফিটনেস/ পাওয়ারলিফটিং, ফিজিক্স, ম্যাথ , স্পেস, youtube, storytelling, history, philosophy, spirituality , tech, artificial intelligence, business সহ আরও হাবিজাবি অনেক জিনিস ।
এর মধ্যে কিছু জিনিসে ছোট-খাটো কিছু অর্জন আছে। মাঝেমাঝেই সার্কাসের খেলার মত ৪-৫ টা বল একসাথে juggling করার বৃথা চেষ্টা করেছি, লজ্জা শরমের সাথে মাথা খেয়ে বলছি বেশিরভাগ সময়েই সবগুলো বল ফেলে দিয়েছি । পড়ন্ত অবস্থায় হয়ত একটা বল কোনরকমে ধরে রেখেছি । তবে, মুখে হাসি ছিল সবসময়ই , কারন, অনেককিছু শিখতে চাওয়ার এই সার্কাসটাই যে আমি বড় ভালোবাসি । আরেকটা জীবন পেলে হয়ত শুধু শিখতাম আর শিখতাম ।
তো, আজকে আপনাদের সাথে আমার একটা প্লে-বুক শেয়ার করবো। আমি কোন জিনিস কিভাবে শিখি , কিভাবে রপ্ত করার চেষ্টা করি সেটার 3 tier system :
✅Tier #3
কোন জিনিস পড়ার মাধ্যমে শেখা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোন সাবজেক্ট সম্পর্কে ৩ টা বই পড়লে আপনি মোটামটি ৮০% মানুষের থেকে এগিয়ে থাকবেন। প্রথমেই তাই কোন ফিল্ডের বেসিক বইগুলো পড়ে ফেলার চেষ্টা করি। তবে এমন অনেক সাবজেক্ট আছে স্পেশালি যেগুলো একদম cutting edge সেগুলো সম্পর্কে বই পাওয়া যায়না। এসব ক্ষেত্রে আমি আমার পছন্দের সাবজেক্টের expert দের twitter এ ফলো করি , সেই সাবজেক্টের top podcast থাকলে মাঝে মাঝে শোনার চেষ্টা করি । twitter/podcast থেকে বিভিন্ন চমৎকার বই/আরটিকেল,newsletter এর সন্ধান পাই , যেগুলো আবার পড়ি । তাছাড়া, এসব সাবজেক্টের sub reddit, discord server গুলতেও মাঝেমাঝেই উকি মেরে আসি নতুন কিছু শেখার জন্য। youtube এও এই সাবজেক্ট এর ভিডিও দেখি মাঝে সাঝে- ইউটিউবও তাই সুন্দরমত এই রিলেভেন্ট আরও কন্টেন্ট প্রতিনিয়ত আমাকে রেকোমেন্ড করে । প্যান্ডেমিক এর মধ্যে অনেকগুলো দারুন newsletter, আর substack subscribe করসিলাম – যেগুলো এখন প্রায়শই information overload এর কারনে পরিনা। হাতেগোনা ২-৩ টা নিইজলেটার হয়ত ভালমতো পড়ি ।
পড়ার মাধ্যমে শেখাটা অসম্ভব কস্ট এফিশিয়েন্ট মনে হয় আমার কাছে- একজন তার সমস্ত জীবনের শিক্ষা দিয়ে লিখে গেছেন একটা বই- সেটা আমি ২০০ টাকা দিয়ে কিনে ১ সপ্তাহে পড়ে ফেলতে পারতেসি । তার চোখ দিয়ে দেখতে পারতেসি দুনিয়াটাকে।
✅Tier-2
গুরুর কাছ থেকে শেখা । . আমি বেশিরভাগ আগ্রহের বিষয়ের একজন এক্সপার্ট কে গুরু হিসেবে মানি, যেকোনো জিনিস অনেক পড়ে , বা চেষ্টা করেও আয়ত্ত না করতে পারলে গুরুর পরামর্শ নেই ।
গুরুশিষ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি খুবই oldschool . আমার জীবনের priority list এ তারা খুবই উপরের দিকের মানুষ । জীবনের বহু বহু ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ ছাড়া উতরাতে পারতামনা ।
গুরুদের সাথে ১ ঘন্টার সেশনের কার্যকারিতা আমার কাছে ৫ টা বই পড়ার থেকেও বেশি। কারণ, তারা তাদের প্রজ্ঞা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাকে একদম পিনপয়েন্ট করে কোন জিনিসের উত্তর দিতে পারে
✅ Tier-1
করে শিখা। জাপানিজ কালচার এবং ফিলসফিতে একটা জিনিস বার বার বলে , সেটা হচ্ছে “knowledge is primarily experiential”
ব্যপারটা অসম্ভব রকমের সত্য . কোন একটা কাজ আমি নিজে হাতে কলমে না করলে, শত শত বই পরেও- শ্রেষ্ঠ গুরুর সান্নিধ্য পেয়েও লাভ পাইনা তেমন। কিন্তু, সামান্য পরিমানে হলেও কাজটা করার অভিজ্ঞতা হলে, তখন বইয়ের কিংবা গুরুর পরামর্শের বিভিন্ন dot কে তখন সহজে connect করতে পারি ।
একটা deadlift কিংবা squat কিভাবে করতে হয়, কিংবা শ্বাসরুদ্ধকর বিতর্কের bubble room এ কিভাবে প্রতিপক্ষের আরগুমেন্টকে গুড়িয়ে দিতে হয় – এটা শত বই পড়েও শিখতে পারতামনা, যদিনা এইগুলো প্র্যাকটিস না করতাম ।
কিংবদন্তী মাইক টাইসন যেমন বলেছিল ঃ
“Everyone Has a Plan Until They Get Punched in the Mouth”
আর, বাস্তবতা যখন মুখ বরারর পাঞ্চ করেছে- তখন এই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দিয়েই পাঞ্চ ব্যাক করার সাহস পেয়েছি ।
ফিটনেস আর এক্সারসাইজের জগতে একটা popular term আছে ঃ “Get the reps in first”
অর্থাৎ, কোন একটা এক্সারসাইজ নতুন শুরু করলে- শুরুতেই ওটা পারফেক্ট হবেনা- পারফেক্ট করার চেষ্টা করারই দরকার নেই শুরুতে।
practice করতে করতেই ধীরে ধীরে perfection আসবে ।
কোন জিনিস যদি আমি সত্যিই আয়ত্ত করতে চাই , সেক্ষেত্রে আমি সেই ডোমেইন সম্পর্কিত কাজের একটা daily habit form করার চেষ্টা করি । হতে পারে সেটা একটা git commit, কিংবা একটা পুশ আপ , কিংবা ৫ লাইন লেখা ।
Rumi বলেছিল “As you start to walk on the way, the way appears.”
তাই, পথে হাটা শুরু করার চেষ্টা করি – হাটা দিলে বাকি পথ কিভাবে কিভাবে জানি এম্নিই এম্নিই সামনে চলে আসে।
Mahdi Mashrur Matin
Engineer.StoryTeller.Life Enthusiast