২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসের দিকের ঘটনা । আমি তখন ক্লাস 10 এ পড়ি উদয়ন স্কুলে । SSC পূর্ববর্তী মডেল টেস্ট চলতেসে তখন স্কুল এ । এক সকাল বেলা biology মডেল টেস্ট এর দিন , biology এর টিচার আসমা আপা এসে দেখলেন যেই রুমে আমাদের মডেল টেস্ট হবে সেই রুম লক করা। আর যেই গার্ড মামার কাছে চাবি থাকে তিনিও আজকে ছুটিতে।
.
তো আরেক দারোয়ান মামা , যার কাছে আরেক সেট চাবি ছিল তাকে ডাকা হল। দেখা গেল, তার কাছে যেই চাবি আছে তার কোনটা দিয়েই রুমের তালা খুলতেসেনা । এমন সময় আমার বন্ধু অর্থী এসে বলল “দাড়ান, আমি একটু চেষ্টা করে দেখি”। অর্থী দুইটা জেমস ক্লিপ দিয়ে কিভাবে যেন দুই মিনিটের মধ্যেই তালাটা খুলে ফেলল ।
.
এরকমই অনেক বিস্ময়কর ঘটনার নেপথ্যে ছিল অর্থী। ওর একটা ব্যাতিক্রমধর্মী গুন ছিল – ও সবাইকে নিমিষেই আপন করে নিতে পারতো, আর কারও প্রয়োজনে নিজেকে উজাড় করে দিতো ও । আমাদের বন্ধুমহলের যেকেউই যেকোনো সমস্যায় পরলে , অর্থী কে জানালেই অর্থী সমাধান নিয়ে হাজির হইত.
.
অর্থী ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী । পুরো নাম ছিল ‘অর্থী রঞ্জন দাস’ । সেইবার আমার এক আত্মীয় মারা গেল এলিফেন্ট রোড এ অর্থীর বাসার পাশেই । ওনার বাসায় গিয়ে আমি তো অবাক । আমার ঐ আত্মীয়ের কাফনের কাপড় কেনা থেকে শুরু করে , লাশ গাড়িতে উঠানো, মুসলমানদের মিলাদের আয়োজন সবকিছু করতেসে অর্থী ।
.
অর্থী ছিল সবার থেকে আলাদা , he was destined to be something very very big. আমাদের সবারই ধারনা ছিল অর্থী খুব কম বয়সেই বিরাট কোন entreprenuer হবে , অথবা হবে কোন বিখ্যাত political leader ।
.
কিন্তু, বিধাতার পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম। ২৮ মে ২০০৮ , আমাদের HSC পরীক্ষার আগের রাতে অর্থী মারা যায় । Pancreas এ infection হয়ে, খুব দ্রুতই কাবু করে ফেলে ওকে । সবকিছুতে এক অসম্ভব ভালোবাসা দিয়ে চারিপাশ মাতিয়ে রাখা ছেলেটা , অসুখ ধরা পড়ার মাত্র ২-৩ সপ্তাহের মাঝেই মারা যায় ।
.
অর্থীর কোন fb/insta/youtube এর ডিজিটাল footprint নাই । তবে আমাদের স্কুলের বন্ধু-বান্ধবী , তাদের মামা-বাবা / স্কুলের টিচারর দের মনে একটা অসম্ভব বড় footprint আছে সেই ১৮ বছরের সেই অর্থীর ।
I couldnt say goodbye to you my friend. We all loved you , but maybe God loved you more