ফুলবানু আপা

Scroll this

আমার মা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখনই আম্মু-আব্বুর বিয়ে হয়। বছর খানেকের মধ্যে আমার বড় আপুর জন্ম হলে, নিজের পড়াশুনা-আব্বুর পোস্টিং আর সদ্য-জন্মানো মেয়েকে নিয়ে যখন হিমশিম খাচ্ছিল আম্মু। তখনই বোনকে দেখাশুনা করা, আর বাসার কাজগুলো গুছানোর জন্য , আমাদের বাসায় আনা হয়েছিল এক কুড়ি বয়সের মেয়ে-নাম তার ‘ফুলবানু’।

আমার বোনের পর আমি হলাম। নিজের সন্তান হারানোর পর, আমাদের দুই ভাইবোনকে পেয়ে এক অদ্ভুদ মায়াজালে পরে যায় সে। এই মায়াজাল থেকে সরে আসতে পারেনাই ফুলবানু আপা। স্বামী-সংসার-প্রতিপত্তিসহ সকল জাগতিক মোহ ত্যাগ করে , নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে সে আমাদেরকে। আব্বুর চাকরির কারনে দেশের এমাথা-ওমাথায় পোস্টিং থাকতো, একা আম্মুকেও তাই ঘরে- বাইরের হাজারটা জিনিস ব্যালেন্স করতে গিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হত- এতসব variable এর মধ্যে ফুলবানু আপা ছিল constant । আমাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা , বাসায় কি রান্না হবে থেকে শুরু করে , আমরা ঠিকঠাকমত পড়ার টেবিলে বসে পড়াশুনা করতেসি কিনা – সব জিনিস দেখাশুনা করত ফুলবানু আপা।

তার সীমাহীন sacrifice এর জন্যই আমাদের দুই ভাইবোনের পড়াশুনা/ক্যারিয়ার এ যতটুকু আসা। আমি জানিনা, একটা মানুষের পক্ষে কিভাবে এতটা মহৎ হওয়া সম্ভব। কোন রক্ত-সম্পর্ক ছাড়াই বছরের পর বছর এভাবে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসে যাওয়া সম্ভব। 
একজীবনে মায়ের স্নেহের পাশাপাশি এক ফেরেশতার স্নেহে বড় হইসি- তাই আমি বিরল সৌভাগ্যবান।

আমার পায়ের নিচের মাটি, আমার higgs boson particle, আমার 3.14159…, আমার ‘uncle tom’, আমার বেহেশত, আমার আরেক মা – সবই আমার ফুলবানু আপা

Tags:

2 Comments

Submit a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *